L
A D I N G
জন্ম

তিনি ২১শে জুলাই ১৯১১ ইংরেজী, মোতাবেক ৬ই শ্রাবন ১৩১৭ বাংলা, ২৪ই রজব ১৩২৯ হিজরী, জুমাবার নিজ পিত্রালয় বড় হাফেজ বাড়ীতে জন্ম গ্রহন করেন।
পিতা, হজরত হাফেজ শামসুদ্দীন (রাহঃ) বড় হাফেজ নামে মশহুর ছিলেন। তিনি নিজ বাড়ীতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হেফজখানা।
জানা যায়, সুদূর বার্মা থেকেও এখানে ছাত্ররা কুরআনের দরস নেওয়ার জন্য আসত।
মাতা, বেগম বদিউজ্জামাল (রাহঃ) ছিলেন তাপসী মহিলা। পবিত্র কুরআনের অধিকাংশ তাঁর মুখস্ত ছিল এবং পূর্ণ অর্থ ও ব্যাখ্যায় তিনি পারদর্শী ছিলেন। এলাকার মহিলাগনের কাছে তিনি ধর্মীয় বিষয়াদি আলোচনা করতেন।
এই মহিমমান্বিত দম্পতির মেধাবী সন্তান শাহ আব্দুল মালেক আল-কুতুবী মুহিউদ্দিন আজমী (রাহঃ) নিজে বর্ণনা দেন,
" তখন আমি দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসার আলিম জামাতের ছাত্র, ছুটিতে বাড়ীতে আসি, শেষ রাতে যথারীতি তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে মোনাজাত করতে আমার কান্না এসে যায়।
আব্বাজান কান্না শুনে আম্মাজানকে ডেকে বললেন," দেখ তোমার ছেলে অল্প বয়সে কি কান্ড করছে"। মা জবাব দিলেন," যেমন বাপের তেমন ছেলে, তাতে অবাক হবার কি আছে"?
বাবা বললেন," তার মা ও কম কিসে"?

শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক জীবন

১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে ছমদিয়া মাদ্রাসা থেকে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া শুরু হয়।
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ভর্তি হন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসায়।
দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে সুলতানুল আউলিয়া হজরত হাফেজ সৈয়দ মুনীর উদ্দিন নুরুল্লাহ (রাহঃ) এর নিকট বাইয়াত লাভ করেন এবং পরবর্তীতে খেলাফত প্রাপ্ত হন।
উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য তিনি ১৯৩৬/৩৭ সালে ভর্তি হন হিন্দুস্হানের বিখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায়।
তিনি শিক্ষা জীবনের প্রতিটি স্তরে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।

পারিবারিক জীবন

১৯৩৫ সালে বাঁশখালী থানার ছনুয়া গ্রামের বিখ্যাত কাতিব বাড়ীর মওলানা মুনীর উল্লাহ (রাহঃ) এর কন্যা মোহতারামা বেগম হরিছা খাতুন (রাহঃ) এর সাথে শাদী মোবারক সম্পন্ন হয়।
পরবর্তীতে তিনি কুতুবদিয়ার দক্ষিন ধুরং গ্রামের মরহুম ছিদ্দিক আহমদের কন্যা মোহতারামা ফাতেমা বেগম
এবং আনোয়ারা বটতলী গ্রামের মরহুম নওয়াব আলী সওদাগরের কন্যা মোহতারামা গুল বাহার বেগমকে শাদী করেন।
বর্তমানে বাবাজান কেবলার ১০ শাহজাদা এবং ৯ শাহজাদীর মধ্যে ৬ শাহজাদা এবং ৬ শাহজাদী জীবিত আছেন।

কর্ম জীবন ও কুতুব শরীফ দরবার প্রতিষ্ঠা

১৯৩৪ সালে ছনুয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মধ্যে দিয়ে কর্ম জীবন শুরু করেন এরপর কিছু দিন ছমদিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন।
১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে পার্শ্ববর্তী লেমশীখালী গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন শামশুল উলুম হামেদিয়া মাদ্রাসা। তিনি দীর্ঘ নয় বছর এই মাদ্রাসাটি পরিচালনা করেন।
এরপর মহান রাব্বুল আলামীনের নির্দেশে বিভিন্ন জায়গায় সফর করেন।
১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর তিনি কুতুবদিয়ায় নিজ বাড়ীতে কুতুব শরীফ দরবার প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৭৬ - ১৯৮৫ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত ১০ বছর কুতুব শরীফ দরবারে তিনদিন ব্যাপী সীরাতুন্নবী (সাঃ) মাহফিলের কর্মসূচী গ্রহন করে ইসলামী পুর্নজাগরণে ভূমিকা রাখেন।
এতে দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ওলামা মাশায়েখগন তাকরীর পেশ করতেন। দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা অংশগ্রহন করতেন।
একদা ছনুয়া মনুমিয়াজী জামে মসজিদে এশার নামাজের পর মোরাকাবারত অবস্হায় হজরতের দাদাপীর হজরত হামেদ হাসান আজমগড়ী (রাহঃ) তাঁর সম্পর্কে হজরতের পীর হাফেজ মুনীর উদ্দিন (রাহঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
" মুনীর আমার আব্দুল মালেক কোথায় আছে দেখতে পাচ্ছ কি? তরিকতে তাঁর শেষ অবস্হান কোথায়?
আমার মালেক বর্তমানে অনেক উর্ধ্ব জগতে সায়ের (ভ্রমন) করছে, তাঁর রুহ কোথায় অবস্হান করছে আমি জানি না। আব্দুল মালেক এখন ফানাফিল্লাহ।"
সুবাহানাল্লাহ, হজরত বাবাজান কেবলা (রাহঃ) কত বড় আল্লাহর ওলী তা হজরতের দাদা পীর আজমগড়ী (রাহঃ) এর মহান উক্তি দ্বারাই প্রমাণিত হয়।
শরীয়তের অনুশাসনের ব্যাপারে তিনি খুব কঠোর ছিলেন। দরবারে আগত নারী পুরুষের জন্য মেহমান খানা পৃথক রাখা এবং অন্দরমহলে প্রাপ্তবয়স্ক বালকের যাতায়াত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
নামাজের ব্যাপারে তিনি বলেন," নামাজ আদায় না করে এই দরবারে তাবরুক গ্রহন করা নিষেধ।" তিনি আরও বলেন,
" আমি পড়েছি, পড়িয়েছি এবং মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছি, আমি মূর্খ অলি নই, আমার দরবারে সিজদা নাই
এবং এই দরবার আমার দরবার নয়, আল্লাহ তায়ালার দরবার, একমাত্র আল্লাহ ব্যতিত কাউকে সিজদা করা হারাম।
" আল্লাহ তা'য়ালার প্রতি তার কতটুকু তাওয়াক্কুল তা ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনা থেকেই বুঝা যায়।
সকলকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে নির্দেশ দিয়ে তিনি নিজের হুজরা শরীফে অবস্থান করেন এবং বলেন,
" আল্লাহর হুকুম ছাড়া আমি স্থান ত্যাগ করতে পারিনা বরং তোমরা দালানের ছাদে আশ্রয় গ্রহন কর।
" মহান রাব্বুল আলামীন তাকে সম্পূর্ণ অক্ষত ও নিরাপদ রাখেন।
হজরত কেবলা আরও বলতেন," আমার একটা তরীকা হবে, যার নাম "তরীকায়ে মালেকীয়া"
যা ১৭৫০ বছর অবধি জারী থাকবে এবং আমি রাসুল (সাঃ) এর কদম বকদম (হুবহু পদাঙ্ক অনুসারী) অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহ এর বাইরে আমি নই।"
মূলত কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালিত করাই তরীকায়ে মালেকীয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

ওফাত

আল্লাহতায়ালার এই মহান অলী ১৯শে ফেব্রুয়ারী ২০০০ ইংরেজী মোতাবেক ৭ ই ফাল্গুন ১৪০৭ বাংলা, ১২ই জিলক্বদ ১৪২১ হিজরী, রোজ শনিবার প্রভুর সান্নিধ্যে চলে যান।
বর্তমানে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে প্রতিদিন অগণিত ভক্তবৃন্দ জিয়ারত করতঃ রুহানী ফয়েজ হাসিল করতে আসেন।
হজরত বাবাজান কেবলা বলেন," এই দরবারে দশ হাজার মানুষ আসতে থাকবে, দশ হাজার মানুষ অবস্থান করবে, দশ হাজার মানুষ যাবে।"
সম্পূর্ণ কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক পরিচালিত এই দরবার নিজ চোখে দর্শন ছাড়া এর মহত্ত্ব অনুধাবন করা সম্ভব নয়।
প্রতি বছর ৭ ই ফাল্গুন ১৯ শে ফেব্রুয়ারী হজরত বাবাজান কেবলার বার্ষিক ফাতেহা ও ওরস শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের বরেণ্য ওলামায়ে কেরামগন তাকরীর পেশ করেন।
ফাতেহা শরীফ চলাকালীন ১৭,১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারী মহিলাদের দরবারে না আসার অনুরোধ করা হয়েছে।
মহিলাদের পর্দা, ইজ্জত, আবরু তথা শালীনতার দিকে লক্ষ্য রেখে এন্তেজামিয়া কমিটি এই সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে। তবে মহিলাদের জন্য ফাতেহা শরীফে ইহকাল ও আখেরাতের কল্যানে বিশেষ মুনাজাত করা হয়।
উল্লেখ্য পবিত্র ফাতেহা শরীফ চলাকালীন সময় ছাড়া অন্যান্য সময় মহিলাদের দরবারে আগমনে কোনও অসুবিধা নেই।